মাওবাদী পরিচালিত স্কুলগুলিতে স্বল্পবয়সীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একনিষ্ঠ গেরিলা রূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে

মাওবাদী পরিচালিত স্কুলগুলিতে স্বল্পবয়সীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একনিষ্ঠ গেরিলা রূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বাজেয়াপ্ত হওয়া বিভিন্ন মাওবাদী নথিপত্র এবং আত্মসমর্পণকারী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, নিষিদ্ধ “রেড আর্মি” বা মাওবাদীদের পরিচালিত এই ধরণের স্কুলগুলির অস্তিত্বকে সামনে এনেছে, যেখানে ২৬শে জানুয়ারী ও ১৫ই আগস্ট দিনগুলিকে “কালো দিবস” এবং জুলাই-আগস্টের একটি সপ্তাহকে “বাম শহীদ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়েছে।

ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলার পেডিয়া, উরেপাল এবং নারায়ণপুর জেলার কুতুল এলাকায় এই স্কুলগুলিতে স্বল্পবয়সীদের বাম আদর্শে শিক্ষিত করে তোলবার জন্য পৃথক কর্মসূচীও নেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী দিনে মাওবাদী সংগঠনের কর্মী বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে তোলা যায়। সেই সময় এই স্কুলগুলিতে কোন পরীক্ষা চলছিল না এবং এই স্কুলগুলি বিভিন্ন আদিবাসী উৎসব ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় বন্ধ থাকতো। এই স্কুলগুলি স্থানীয় গোন্ডি ভাষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

সুন্দররাজ পি, সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ, বিশেষ গোয়েন্দা শাখা (SIB) HT(হিন্দুস্তান টাইমস) কে বলেন, “ওরা সেই অঞ্চলগুলিতেই আছে, যেখানে কোন প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই এবং প্রশাসনের নাগালের থেকে দূরে। ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরী করবার কোন লক্ষ্য এই স্কুলগুলির নেই, বরং এগুলির মাধ্যমে তাদের মগজ-ধোলাই করা হয়। মাওবাদী স্কুলগুলির সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও সংখ্যাটা খুব একটা বেশী নয় বলেই মনে হয়, কারণ বস্তার অঞ্চলে জেলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সরকারের সাথে স্থানীয় মানুষের যোগাযোগ অনেকটা বেড়েছে”। বাজেয়াপ্ত নথিপত্র এবং আত্মসমর্পণকারী ও গ্রেপ্তার মাওবাদীদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ এই স্কুলগুলির বিষয়ে জানতে পেরেছে।

আত্মসমর্পণকারী একজন মাওবাদী শিক্ষক- মিঞ্জ, যিনি শুধুমাত্র তাঁর নামের প্রথম অংশ ব্যবহার করেন, HTকে তিনি বলেন যে, পঞ্চম শ্রেণী অবধি প্রাইমারী স্কুলগুলি নিয়ে Maoists’ Mobile Academic School (MAS) তৈরী হয়েছে, যা অবুঝমাড়ের ঘন জঙ্গলাকীর্ণ ভূখন্ডের নারায়ণপুর ও দক্ষিণ বাস্তার জেলার দান্তেওয়াড়া, সুকমা, বিজাপুর ও রাজনন্দগাঁও-এ চালু আছে। মাওবাদীরা তিন ধরণের স্কুল চালায় – প্রাথমিক বিদ্যালয় MAS-এর একটি অংশ, পরবর্তী ধাপ Mobile Political School (MoPOS), যেখানে বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ পড়ানো হয়, এবং সর্বশেষ Mobile Military School (MoMIS), যেখানে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্কুলগুলি মূলতঃ একটি আশ্রম, যা তিরিশ থেকে চল্লিশটি বাচ্চাকে নিয়ে তৈরী। কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে পুরো কাঠামোটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। “স্কুলের ঘরগুলি তাঁবুর মতন, ঘরের ছাদগুলি খড়ের হয়। শিক্ষার্থীরা মাটিতে বসে এবং প্রতি শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকের জন্য একটি করে চেয়ার আর ব্ল্যাকবোর্ড থাকে। বাচ্চাদের জন্য স্কুল ইউনিফর্ম এবং খাবারের ব্যবস্থা থাকে।” মিঞ্জ বলেন, এছাড়াও প্রতি বছর প্রতিটি স্কুল এক লাখের কাছাকাছি টাকা পায়। মিঞ্জ আরো বলেন যে, যখনই স্কুলে তল্লাশি হয়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার সামগ্রীগুলি লুকিয়ে ফেলে এবং স্কুল ছেড়ে চলে যায়। তল্লাশি শেষ হবার পরই তারা ফিরে আসে। “যদিও এরকম ঘটনা খুব কমই হয়” – বলে মিঞ্জ যুক্ত করেন।

সুকমা-র শিক্ষা বিভাগীয় অফিসার রাজেন্দ্র রাঠোর বলেন যে, বিদ্রোহীরা বাচ্চাদের নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করবার জন্য সরকারি স্কুলগুলির ক্ষতি করে! এই ধরণের স্কুলগুলির অস্তিত্ব ইঙ্গিত করে যে ছত্তিশগড়ের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় সরকার নতুন স্কুল তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও, তার প্রভাব স্থানীয় স্তরে খুব উল্লেখযোগ্য নাও হতে পারে।

 

লাল সংবাদ