কভিড-১৯, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধ-প্রতিকারে ব্যর্থ, নয়াগণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র অতীতে পেরেছে, ভবিষ্যতেও পারবে। কিন্তু কেন ও কীভাবে?

কভিড-১৯ (করোনা) বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় সমগ্র বিশ্ব-ব্যবস্থা একটা ঘোরতর সংকটে পড়েছে এটা প্রায় সবাই বলছে। অনেকে অবশ্য একে পুুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের এই সমস্যা বা সেই সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এটা বলছে না যে, এটা খোদ পুুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থারই ফল, এটা ব্যবস্থারই সৃষ্টি, এবং এই ব্যবস্থায় এমন ধরনের বা ভিন্ন ধরনের এরকম বা আরো বহু ভয়াবহ সংকট মানবজতিকে গ্রাস করতেই থাকবে। প্রায় কেউই বলছে না যে, এই ছড়িয়ে পড়ার আসল কারণটি কী, এবং কেন এই ধরনের নিরাময়অযোগ্য সংকট হলো।
বলা হচ্ছে অবশ্য ভ্যাকসিন ও ঔষধ আবিষ্কার হলে করোনা প্রতিরোধ করা যাবে, মানবজাতি রেহাই পাবে। নিশ্চয়ই পাবে। এর চেয়ে অনেক খারাপ রোগকেও বিজ্ঞান অতীত পুঁজিবাদী বা সামন্তবাদী যুগেও উচ্ছেদ করেছে। এমনকি এসব আবিষ্কার না হলেও ইতিমধ্যেই আবিষ্কৃত বিজ্ঞান বলে যে, কোনো কিছু না করলেও অন্তত এই ভাইরাসে কয়েক কোটি বা বহু কোটি মানুষ মারা গেলে বাকি মানুষ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করবে এবং ভাইরাসটি একা একাই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। ধরা যাক, একশ’ কোটি মানুষই মারা গেল। তাতে মানবজাতির বাকি অন্তত ৬০০ কোটি বেঁচেই থাকবে। তাই বলে কি এই প্রক্রিয়াটিকে সঠিক ও ন্যায্য বলা যাবে? যেমনটা শেখ হাসিনা বলছে যে, করোনাকে নিয়েই বসবাস করতে হবে! তাই বলেকি অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য এবং মানুষের চরম দুর্গতি কারক ‘প্রাকৃতিক’ দুর্যোগকে মেনে নেয়াটা মানবজাতির জন্য ভাল কিছু। এটা-কি সভ্যতার বিকাশের লক্ষণ? এটা-কি চলমান ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী চরিত্র এবং ব্যর্থতাকে ঢাকতে পারে?
প্রথমত, এমন ভাইরাস বিগত কয়েক দশক ধরে বেশি বেশি হচ্ছে কেন? সার্স, মার্স, ইবোলা, এইডস এগুলো-তো আগে পৃথিবীতে ছিলনা এরকমই বলছেন বৈজ্ঞানিকরা। বরং বিরাট সংখ্যক বিজ্ঞানীই দেখাচ্ছেন যে, ‘মানুষ’ ও ‘সভ্যতা’ (পড়ুন পুঁজিবাদীরা ও সাম্রাজ্যবাদী আধুনিক ‘সভ্যতা’) পৃথিবীর পরিবেশকে এমনভাবে দুষিত ও ধ্বংস করেছে যে, তার প্রতিক্রিয়াই হলো এসব বিপর্যয়। (এর বাইরেও উষ্ণায়নের মত বিশাল সমস্যাও রয়েছে যা সমগ্র পৃথিবীকেই ধ্বংসের দিকে নিতে পারে)। সুতরাং এমন ভাইরাস যে অনিবার্য বা সম্পূর্ণত প্রাকৃতিক তা বলা যাবেনা।
দ্বিতীয়ত, আজকের পৃথিবীতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মুনাফাবাদী ব্যবস্থা তাদেরকে গণমানুষের স্বার্থ বিষয়ে এতটাই নিস্পৃহ করে তুলেছে যে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধ্বংস ও দুর্বল করার জন্য যেকোনো ধরনের বর্বর ও অমানবিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এমনকি সেটা যদি তাদের নিজেদের স্বার্থকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে তা সত্ত্বেও। তাদের নিজেদেরই এই ব্যবস্থার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নিরংকুশ নয়, বরং অনেক সময় ব্যবস্থার অনিবার্য গতি ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ইচ্ছার বাইরে তাদেরকে পরিচালিত করে নেয়।
যেমন, ৭৫ বছর আগে ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ নিশ্চিত হবার পরও বহুবিধ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা চালিত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জাপানের উপর দুটো পারমাণবিক বোমা ফেলে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে মোট ৩ লক্ষের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। উপরন্তু, এর প্রতিক্রিয়া যুগের পর যুগ ধরে এখনো চলছে এবং বহু মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে রয়েছে। সম্পদের বিপুল ধ্বংসের কথা নাই-বা বলা হলো। সুতরাং করোনার মতো ভাইরাসকে তারাই এই পক্ষ বা ঐ পক্ষ সৃষ্টি করছে না ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার জন্য মজুত করেনি, সেখান থেকে দুর্ঘটনাবশত সেটা বাইরে চলে আসেনি, তা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা। ইতিমধ্যেই করোনা বিষয়ে চীন ও মার্কিন একে অন্যকে এজন্য দায়ীও করছে। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকেও বিলগেটসের নাম ধরে তাকে দায়ী করা হয়েছে। তাই, এর বিস্তার তাদের কারণে ও পরিকল্পনায় শুরু হয়ে এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কিনা, অথবা এরকমই তারা চাইছে কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
তৃতীয়ত, এটা খুব স্পষ্ট যে, করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যাকে একটি দেশে সমাধান করা যাবে না। ওরাই বলছে, হয় প্রত্যেকে নিরাপদ, নইলে কেউই নিরাপদ নয় (এধরনের কথা শুধু সমাজতন্ত্রী-কমিউনিস্টরা মানবজাতির চুড়ান্ত মুক্তি সম্বন্ধে বলতেন)। এ অবস্থায় এর প্রতিরোধ, চিকিৎসা এসবও বৈশ্বিক হতে হবে সেটা বলাই বাহুল্য। যখন তার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বা ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি, তখন বিশ্বের সব দেশের বিজ্ঞানীদের প্রয়াস, গবেষণা, অর্থসংকুলান, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এসবকে সমন্বিত করা ও দ্রুত এর সমাধান বের করার পথে বর্তমান ব্যবস্থা যেতে সক্ষম নয়। ইতিমধ্যে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বহু দেশে বিপুল প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে, বিপুল গোপনীয়তা রক্ষা করে। এই বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ হলো, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা সক্ষম নয় বিজ্ঞানীদের বিচ্ছিন্নতা নিবারণ করে সমগ্র বিশ্বসমাজের জ্ঞানকে, প্রজ্ঞাকে, অর্থ ও সামর্থকে মানবজাতির যৌথ কল্যাণে ও অগ্রগতিতে বিনিয়োজিত করা। এমনকি তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেও তারা এড়াতে সক্ষম নয়।
কেন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা? সেটা হলো নিজ নিজ দেশের পুঁজির স্বার্থে করোনার মহাসংকট সৃষ্ট নতুন সুযোগে মুনাফাকে একচেটিয়া করে নেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা। কে আগে থেকে এই নতুন পণ্যের এত বিশাল বিশ্ববাজারটি দখল করতে পারবে তার অশ্লীল সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা চলছে। আগেই যে বলা হয়েছিল, যদি ৬০০ কোটি লোক বেঁচে থাকে তাহলে তাদের প্রত্যেকের জন্য ভ্যাকসিন ও ঔষধ বাধ্যতামূলক করলে কতটা কার লাভ হবে সে হিসেব চলছে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বিতর্কিত হলেও একটি ঔষধ (যা এতদিন ইবোলা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে) রেমেডিসিভির-এর সমস্ত উৎপাদন মার্কিনীরা কিনে নিয়েছে। এবং অন্য কেউ এটি ইউরোপের বাজারে বিক্রি করতে পারবে না।
চতুর্থত, ধরা যাক এই আক্রমণ ছিল অনিবার্য, তাহলেও তার প্রতিক্রিয়ায় জনগণের দুর্গতি হ্রাসের জন্য প্রথম প্রয়োজন ছিল একটি গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা, একটি গণমুখী অর্থব্যবস্থা, তথা একটি সার্বিক গণমুখী সমাজ-ব্যবস্থা। শুধু আমাদের দেশে নয়, উন্নত সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যাবে যে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ক্ষেত্রেই কম/বেশি ভেঙ্গে পড়েছে। আমাদের দেশে এটা কতটা শোচনীয় সেটা আমাদের ইতিপূর্বকার বিভিন্ন লেখায় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে চলতি মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই সেটা বোঝা সম্ভব।
একটি গণবিরোধী মুনাফাবাদী দুর্নীতিপরায়ণ সমাজব্যবস্থায় জনগণের এই চরম দুর্ভোগ নিয়েও বাণিজ্য, দুর্নীতি চলছে। এথেকে শাসকশ্রেণি সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত রয়েছে। জনগণকে বঞ্চিত করে নিজেদের কোটারী অংশের জন্য সুচিকিৎসার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষকে তারা স্রেফ মেরে ফেলছে।
এর সাথে যুক্তভাবে যদি আমরা গণমানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে আলোচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে, জনগণের জন্য তারা কতটা দুর্গতিপূর্ণ ও ভঙ্গুর একটা জীবিকা-ব্যবস্থা ও জীবন তৈরি করেছে। আগামীতে যে ভয়াবহ মন্দার কথা বলা হচ্ছে তাতে মানুষের বেকারত্ব ও দুর্গতি, অনাহার ও অপুষ্টি, দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুÑ কোনোটাই অনিবার্য নয়। বর্তমান বিশ্বে কৃষিতে যে উৎপাদনশীলতা আবিষ্কৃত হয়েছে তার অর্ধেক মাত্র সঠিক ব্যবহার হলেও এবং তার সঠিক অধিকার জনগণ পেলে বিশ্বের একটি মানুষও না খেয়ে মরতে পারেন না। বিশ্বের যে সম্পদ রয়েছে তাতে বছরকে বছর কোনো মানুষেরই কোনো অনিশ্চয়তায় পড়ার কথা নয়। কিন্তু সেটা হবার নয়। কারণ, আমরা জানি যে, পুুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ নিজ মুনাফা ছাড়া কোনো উৎপাদন করবে না, তারা যে উৎপাদন করবে সেটা জনগণের প্রয়োজনে নয়, এবং তারা নিজেদের ভোগ ও অন্যায় অপ্রয়োজনীয় সুখ-আনন্দ-বিলাসের জন্য এর একটি বড় অংশ ব্যয় করবে, করতে বাধ্য।
কিন্তু তারা মুনাফাবাদী ও নৈরাজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বের কারণে অনিবার্য সংকটে পড়েছে, আরো পড়বে। সেজন্য তারা জনগণকে কষ্ট দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে মারামারিও করছে ও করবে। এর পরিণতিতে যদি জায়গায় জায়গায় তারা যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়, যার আলামত আমরা পূর্ববর্তী সিরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা বাদেও নতুন করে দক্ষিণ চীন সাগর, চীন-ভারত, চীন-পাকিস্তান, ইত্যাদি সংঘাতে ও উত্তেজনায় দেখছি, তাহলে দেশে দেশে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা আরো বহুগুণ বেশি হয়ে পড়বে। ট্রাম্পের মত ফ্যাসিস্ট মূর্খ ক্ষমতালোভী ও মিথ্যুক যদি তার স্বার্থরক্ষায় করোনা-বোমা ব্যবহার শুরু করে (প্রতিক্রিয়ায় অন্যরাও শোনা যাচ্ছে ইয়েমেনে সৌদি আরব, ছত্রিশগড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টরা ইতিমধ্যে করোনা জীবাণূ ছড়িয়ে দেবার ‘কৌশল’ ব্যবহার করেছে) তাহলে কতটা ভয়াবহ বিশ্ব-পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধের কথা না হয় না-ই আনা হলো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হয় যে, করোনার চেয়ে বহুগুণ বড় মানব-শত্রু হলো পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থাটি। এর উচ্ছেদ না হলে বিশ্বের জনগণ ও মানবজাতি এধরনের চরম দুর্ভোগ থেকে কোনো ক্রমেই মুক্তি পাবেননা। এরকম একটির পর আরেকটি ‘গজব’ আসতেই থাকবে।

* এই বিশ্ব-ব্যবস্থারই একটি ক্ষুদ্র শরীক হলো আমাদের দেশ ও তার শাসকরা, যদিও তাদের ভাবভঙ্গি ও কথাবার্তা থেকে মনে হবে যেন তারা বিশ্বের এক মহাশক্তি; যাকিনা এক মহান জাতির মহান নেত্রীর নজীরবিহীন নেতৃত্বে তার এক মহান পিতার প্রতিষ্ঠিত দেশে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদর্শ ও উন্নয়নের ধারক।
দেশের গণবিরোধী শাসকশ্রেণি, রাষ্ট্র ও বিশেষভাবে হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার করোনাকালে যাকিছু করে চলেছে তার গণবিরোধিতা, দেশদ্রোহিতা ও ব্যর্থতাকে তুলে ধরে আমরা বহু বক্তব্য ও তথ্য দিয়েছি। প্রথমদিকে মূর্খের মতো তারা বলেছে যে, বীর বাঙালি জাতি নাকি করোনাকে পরোয়া করে না (৭ মার্চের ভাষণে মুজিবের হম্বি-তম্বির মতো); আর এখন বলছে করোনাকে নিয়েই থাকতে হবে (২৫ মার্চে মুজিবের সারেন্ডারের মত)। তার উপর আলোচনা এখানে নয়, বরং আমরা এই ব্যবস্থার, করোনাকালে, দুটো মৌলিক প্রশ্নে কিছুটা আলোচনা করবো। যার একটি হলো, এর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এবং দ্বিতীয়টি হলো, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
কারণ, মানুষ এখন সুস্থ্য থাকার জন্য কবিরাজ ধরছে, আল্লার কাছে ক্ষমা চাইছে আর হাসপাতালে হাসপাতালে পাগলের মত ঘুরছে। শুধু করোনা নয়, যেকোনো মরণব্যধিতে একটু চিকিৎসা পাবার জন্য। এটা হলো জরুরি জীবন রক্ষার সমস্যা। মানুষই যদি মরে যায়, তাহলে আর কী হবে অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা করে। আর অন্য বিষয়টি হলো জীবিকার সমস্যা, কারণ, মানুষ কাজ করে অর্থাৎ উৎপাদন করে খায়, উৎপাদনের সাথে যুক্ত থাকে। এভাবে অর্থনৈতিক জীবন তার জীবিকার সাথে যুক্ত। মানুষ যদি খেতেই না পায়, তাহলে চিকিৎসাই বা হবে কীভাবে? এই হলো বর্তমানকালের সবচেয়ে বড় দুটো আলোচনার জায়গা, এই ব্যবস্থায় এক অনিবার্য ডিলেমাও বটে।
আমরা এজন্য দুটো নিবন্ধের জায়গা নেবো। প্রথমে বর্তমানেরটি হবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর।

* সমাজের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাটিই হলো মূল বিষয় যা থেকে উপরোক্ত দুটো বিষয় বেরিয়ে আসে। এবং আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সৃষ্টি সেখান থেকেই, যাকিনা মানুষের জীবনকে ঘিরে রয়েছে, বিশেষত করোনাকালে। সেগুলোর অনেককিছুই এখন আলোচনায় চলে আসছে। পরিবহন থেকে শুরু করে গৃহকর্মীর সমস্যা, বাসাবাড়ির ভাড়ার সমস্যা থেকে ত্রাণ চুরির সমস্য। আমাদের দেশে আবার সর্বব্যাপী দুর্নীতি সবকিছুকেই গ্রাস করেছে। সবাই বলছে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, করোনায় সবকিছু বদলে যাবে। কিন্তু কী বদলাবে, পরিবর্তে কী তাকে প্রতিস্থাপন করবে, এবং কীভাবেই বা সেটা ঘটতে পারেÑ এসবই হলো মৌলিক প্রশ্ন।
সেসবের আলোচনা একটি বিশাল বিষয়, যদিও তাকে আনতেই হবে। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থার কর্তারা এখনো ব্যবস্থাটিকে ভালই বলছে (আমাদের দেশে মূর্খ ও প্রতারক কর্ত্রী ও কর্তারা বলছে তারা নজীরবিহীন কাজ করছে, এবং তাদের দ্বারা চালিত ব্যবস্থাটি খুবই ভাল)। আর যারা একটু সৎ ও চিন্তাশীল তারা এর পরিবর্তনের কথা বলছেন। কিন্তু কী ধরনের পরিবর্তন? চলমান ব্যবস্থার পরিবর্তে কী ধরনের ব্যবস্থা আমরা চাই, কোন সমাজ ব্যবস্থা মানুষের এই সমগ্র সমস্যাগুলোকে তাদেরই অনুকূলে সমাধান করবে, সেটা যদি পরিষ্কার না থাকে, তাহলে কখনো ব্যবস্থার সঠিক কোনো পরিবর্তন হবে না। এমনকি অধিকতর খারাপ পরিবর্তনের দিকে সেটা ধাবিত হতে পারে। হিটলার এসেছিল এই ‘সভ্য’ বিশ্বেই, এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ বাধিয়েছিল সাম্রাজ্যবাদীরা, যাতে অন্তত ৫ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, অন্যান্য ক্ষতি ও দুর্গতির কথা বাদ দিলেও। সেটাও পরিবর্তন বটে!

* করোনাকালে দেশের যে ব্যবস্থাগুলোর ব্যর্থতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা ও গণবিরোধিতা স্থূলভাবে প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো হলোÑ
১। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, তথা জীবন রক্ষা ও সুস্থ্য জীবনের সমস্যা।
২। কৃষি ও কৃষি-ভিত্তিক ছোট-মাঝারি উৎপাদনকে বাঁচানোর সমস্যা।
৩। বিদেশ-নির্ভর শিল্প, বিশেষত গার্মেন্ট সমস্যা।
৪। রেমিটেন্স নির্ভর অর্থনীতির সমস্যা।
৫। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সমস্যা।
৬। পরিবহন ব্যবস্থা।
৭। বাসস্থান বিশেষত বস্তি বা বস্তিসদৃশ বাসস্থানের সমস্যা।
৮। শিক্ষা-ব্যবস্থার সমস্যা।
৯। বিনোদনের সমস্যা।
১০। তরুণ শক্তিকে রক্ষা, শিক্ষিত করা ও সমাজ-গঠনে কাজে লাগানোর সমস্যা।
১১। গণস্বার্থ ও দেশের স্বার্থ বিষয়ে উদাসীন বা তাকে ব্যবহার করে অর্থ বানানোর মত একটি চরম প্রতিক্রিয়াশীল শাসকশ্রেণির রাষ্ট্রক্ষমতার সমস্যা।
১২। একটি ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক (বুর্জোয়া অর্থেও) শাসনের সমস্যা।
১৩। এবং, সর্বব্যাপী দুর্নীতির সমস্যা।
এর সাথে যুক্ত ও এথেকে উদ্ভূত আরো বহুবিধ প্রশ্নকে পৃথক করে আলোচনা করা যেতে পারে।

* উপরোক্ত সবগুলো বিষয় একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত। তবে, ২নং থেকে ৭নং পর্যন্ত সমস্যাগুলো সরাসরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত, জীবিকার মৌলিক সমস্যার সাথে যুক্ত। যা আমরা পরবর্তী নিবন্ধে আলোচনার আশারাখি। এগুলো সমগ্রটাই প্রথমে আলোচিত পুুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থার থেকে জাত। এবং আমাদের দেশে সেটা রূপ পেয়েছে এক সাম্রাজ্যবাদী দালাল, আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদী (দেশদ্রোহী, লুটেরা ও নির্মম শোষক) ও আধা-সামন্তবাদী (ও আধা-ধর্মবাদী) আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়। যা এই ব্যবস্থাকে বাধ্য করেছে করোনাকালে তার চরম প্রতিক্রিয়াশীল নীতিগুলো গ্রহণ করতে, নিজেদের ব্যর্থতাকে দগদগে করতে, এবং অধিকতর ফ্যাসিস্ট পথে যাত্রা করতে। সুতরাং করোনা যতটা ‘অনিবার্য’ তার চেয়ে বেশি অনিবার্য হলো তাদের এই ব্যর্থতা।
করোনা অন্তত এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যখন স্থবির হয়ে পড়ে তখন বিশ্বপরিবেশের এক বিরাট উন্নতি ঘটে। যে শহরগুলোতে মানুষের পক্ষে বাস করা অসম্ভব বলে বায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছিলেন তারা বলছেন এখন সেসব শহরেও বিরল পাখি গান গাইছে, ফুল ফুটছে, বাতাস হালকা হয়ে গেছে, পৃথিবী সুন্দর হয়ে গেছে।
করোনা একইভাবে প্রমাণ করেছে যে, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী নগরায়ন ও উন্নয়ন ব্যর্থ হয়েছে মানুষের সুস্থ ও করোনামুক্ত জীবন দিতে। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বড় বড় উন্নত শহরগুলোই, যেগুলো পুঁজিবাদের কেন্দ্র, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। দিল্লি আর নিউইয়র্কের চিত্র দেখুন। ঢাকা-না.গঞ্জ-গাজীপুর-সাভার, চট্টগ্রামও তাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সফলতার সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে মানুষের যাওয়াকে ঠেকিয়ে দিয়েছে চিকিৎসা-ব্যবস্থার উপর আস্থাকে একেবারে কমিয়ে এনে; কম পরীক্ষা, দুর্নীতি, ডাক্তার-অক্সিজেন-ভেন্টিলেটর-আইসিইউ নেই বানিয়ে, রোগীদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখার মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাকে কমিয়ে দেখানোর মাধ্যমে। বহু সৎ বিশেষজ্ঞ বলছেন, আক্রান্ত অন্তত এর দশগুণ, এবং মৃত্যু অন্তত দ্বিগুণ, যা জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে ভারতের প্রায় কাছাকাছি (এই সংখ্যার ক্ষেত্রেও স্বামী-স্ত্রীর মত মধুর সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে)।
যাহোক, উপরে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো সেগুলোর চিত্র ও পরিস্থিতি আমরা আমাদের করোনাকালের লেখাগুলোতে অনেকটাই মূর্তভাবে এনেছি। যাতে সমাধানের সূত্র রয়েছে বা তার ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একেবারে মৌলিক জায়গায় যদি আমরা দেখতে চাই তাহলে বিস্তারিতভাবে একটি গণমুখী বিপ্লবের কর্মসূচিতেই শুধু তা ব্যক্ত করা যায়। এখানে সেটা সম্ভব নয়।

* আমরা এখন সংক্ষেপে শুধু স্বাস্থ্যব্যবস্থার আলোচনাটিতে প্রবেশ করবো।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার আালোচনা এজন্য জরুরি যে, এটা মানুষের জীবনকে নিয়ে সবচেয়ে জরুরি সমস্যা, যা আবার তার সুস্থ্যজীবনের সাথে যুক্ত। অবশ্যই স্বাস্থ্যসমস্যা উপরোক্ত সবগুলো বিষয়ের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুস্থ পরিবেশ, পানি, বায়ু, মাটি, খাদ্য না হলে, বা সুস্থ বাসস্থান না থাকলে, বিশেষত করোনাকালে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা না থাকলে সুস্থ মানুুষ আশা করা যায়না। এগুলো সরাসরিই মহামারী বিশেষত করোনার সাথে যুক্ত। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিজস্ব একটা জগৎ রয়েছে, যাকে পৃথক করে আলোচনা করা যায়, অন্য সবকিছুর মতই।
ইতিমধ্যেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ভারতের দালাল হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার করোনার ছড়িয়ে পড়ার মুখে কয়েকটি ফতোয়া দিয়ে চলেছে এক, শুধু আমরা তো নয়, সারা বিশ্বেই এমনকি উন্নত দেশেও এই অবস্থা। বরং অনেক উন্নত দেশের থেকে আমরা ভাল করছি। দুই, আমরা তো চেষ্টা করছি, আমরা কী আর করতে পারি; বিশ্বের কেউই তো পারছে না। তিন, আমরা লকডাউন-ছুটি দিচ্ছি, জনগণই তো সেগুলো মানছে না। আমাদের দেশের জনগণ-তো সচেতন না (বহু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, যারা সমাজের সবচেয়ে অসচেতন অংশ, কিন্তু নিজেদেরক সবার চেয়ে জ্ঞানী মনে করেন, এই ৩নং প্রচারটি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত)।
সুতরাং ভ্যাকসিন-ঔষধ আসুক, ততদিন আল্লা যা করে! তাই, আল্লার গজব, পাপের শাস্তি, আল্লাহ মানুষের ঈমান পরীক্ষা করছেন, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, তিনিই মাপ করবেনÑ ইত্যাদি ধর্মবাদী ফতোয়া সমানে চলতে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নিজস্ব একটা ওলেমা লীগও রয়েছে যে ইতিমধ্যে এই প্রচারে এগিয়ে রয়েছে বলছে এটা মহামারী নয়, মহামারী বললে সেটা কুফরী ও শিরক।
অন্যদিকে বিএনপিসহ বহু বামপন্থী এবং বিবেকবান বুদ্ধিজীবীরা পর্যন্ত সরকারি ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করছে। কিন্তু এর সমাধানে ব্যবস্থার মৌলিক জায়গাগুলোতে ঠিক কোন রূপান্তরগুলো প্রয়োজন তা অনেকেই, বিশেষত বিএনপি’র মত বুর্জোয়া দলগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ, তারাও একটু অদল-বদল করে এই ব্যবস্থাকেই রাখতে চায়, তার মৌলিক ধরনের রূপান্তর তাদের কাম্য নয়, বা তাদের সামর্থাতীত। শুধু দুর্নীতির কথা বলছে বটে, তবে অন্তত শাসকশ্রেণির সবগুলো পক্ষ, আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, জাপা, জামাত এবং সামরিক বেসামরিক আমলা, এনজিও ও সুশীল সমাজÑ সবার দুর্নীতিরই ফসল যে বিগত ৫০ বছর পর আজকের এই করোনা বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থাÑ সেটা বলাই বাহুল্য।

* স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা যে ভেঙ্গে পড়েছে তা প্রায় সবাই বলছেন (হাসিনা, ওকা ও হামা বাদে)। প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রতিদিনের প্রথম পৃষ্ঠার খবর ও একটি করে মর্মান্তিক ছবিই সেগুলো বলে দিচ্ছে।
এতটা শোচনীয় অবস্থার কেন সৃষ্টি হলো?
প্রথমত এর কারণ হলো, বেসরকারিকরণ, তথা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ‘সেবামূলক’ পেশার জায়গা থেকে প্রকাশ্যভাবে ব্যবসায়ের বিষয়ে পরিণত করা।
শ্রেণিবৈষম্যমূলক ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাধীনে ব্রিটিশ আমল থেকেই সরকারি হাসপাতালে জনগণের চিকিৎসা ভাল ছিল না। তথাপি ‘আর্তের সেবা কর’ অনেকটা ছিল। দুর্নীতিও ছিল, কিন্তু অনেকটা গোপনে, লুকিয়ে। পাকিস্তান আমল পর্যন্তও এ অবস্থা কিছুটা সহনীয় মাত্রায় ছিল, অবশ্য বাড়ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশ আমলে ক্রমে ক্রমে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বেসরকারিকরণ করে দেয়ার ফলে তার অবস্থা হয়েছে বর্ণনাতীত। ‘প্রথম হও’, ‘বড় হও’, টাকা বানাও, আত্মস্বার্থ দেখো এইসব মতাদর্শ, এবং সর্বব্যাপী দুর্নীতিÑ বিগত পঞ্চাশ বছরে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যা এতদিন ব্যবস্থাটিকে কোনেরকমে চালিয়ে নিচ্ছিল বটে। কিন্তু করোনা তাকে একেবারে ন্যাংটা করে দিয়েছে। (করোনার যদি কিছু ভাল দিক খুঁজতে হয়, তাহলে এটা সহ সবক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার ব্যর্থতার উন্মোচন-দক্ষতাকে রাখতেই হবে। এখন সবাই বলছে ‘পরিবর্তন দরকার’)।
যখন বেসরকারি হচ্ছে, তখন ডাক্তাররা মুনাফা খুঁজবেন, তারা জীবনের ঝুঁকি নেবেন না, বড় বড় হাসপাতালগুলোতে অনেক টাকা ব্যয়ে শুধু ধনীরা ভাল চিকিৎসা পাবেন, মুনাফা নেই বা ঝুঁকি দেখলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস, বেসরকারি হাসপাতাল তারা বন্ধ করে দেবেন। আমাদের মত চরম গণবিরোধী আমলা-মুৎসদ্দি পুঁজিবাদে এটাই স্বাভাবিক। হাসিনার বাপের সাধ্য নেই কাউকে তার ব্যবসা চালাতে বাধ্য করার। আমার লাভ হবেনা, আমি ব্যবসা করবোনা, হাসিনার কী? সংবিধান আমাকে এ অধিকার দিয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা তো স্পষ্টভাবে এটা বলছেও। বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা সরাসরি না বললেও তারাও একই দর্শন দ্বারা চালিত হতে বাধ্য। কেউ এখানে নিজ টাকা খরচ করে জনসেবা করতে বসেনি।
আর সরকারি হাসপাতালগুলোও এর ফলেই গণমুখীভাবে চলতে নিম্নতম সক্ষমতা হারিয়েছে। সবাইতো দেখছেই বেসরকারি পাটকলগুলো ভাল চললেও সরকারিগুলোকে লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে গরীব মানুষকে যতটা দেয়া হয়, তাইতো বেশি। আর কী চায় হাভাতের দল! তাদেরকে কি হাসিনা মাগনা চিকিৎসা করবে? রোগ ভাল করতে হলে প্রাইভেটে যাও! নতুবা ঘুষ দাও! চিকিৎসা পাবে। মৃত্যুর আগে যেটুকু জমি-সম্পদ আছে সেগুলো ডাক্তার-হাসপাতালগুলোতে দিয়ে তারপর মরে যাও!
মানুষ তাই যাচ্ছে, যাদের সামর্থ রয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালগুলো অনেকেই ভর্তি ও চিকিৎসা করছে না। মরিয়া হওয়া মানুষেরা পথে ঘুরতে ঘুরতে পথেই অনেকে মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজ গ্রামে বা বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনের সামনে মরার জন্য কিছু সময় পাচ্ছেন।
অবশ্য সকল পুঁজিবাদী দেশ মুনাফাভিত্তিক হলেও সেগুলোর মাঝে পার্থক্যও রয়েছে। প্রথমত, সাম্রাজ্যবাদী বা স্বাধীন পুঁজিবাদী দেশগুলো থেকে আমাদের মত ৩য় বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত দেশের পরিস্থিতি মৌলিকভাবে ভিন্ন। কল্যাণমুখী পুঁজিবাদী দেশগুলোতে স্বাস্থ্যখাত প্রায়ই সরকারি কর্তৃত্বে। এবারকার করোনাতে দেখা গেছে সেই দেশগুলোতেই করোনা দমন হয়েছে সবচেয়ে সফলভাবে, সবচেয়ে ভালভাবে জনগণ চিকিৎসা পেয়েছেন, তাদের জীবিকার সমস্যা সবচেয়ে কম হয়েছে (অবশ্য যদি সরকারিকরণ করা হয় মুজিব-আমলের মত স্রেফ লুটপাটের উদ্দেশে তাহলে আর সেটা হতে পারে না। কারণ, সরকারিকরণই সমাধানের কেন্দ্র নয়। সরকার ও রাষ্ট্রটি কার সেটি হলো প্রথম গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো কার? জনগণের নাকি গণশত্রুদেরÑ সেই মৌলিক প্রশ্নের সমাধান না করে সরকারিকরণও আমাদের মত দেশে তেমন কোনো কাজের নয়। ফলে এসব দেশে সরকারি মাল-কে দরিয়ায় ঢালার রেওয়াজ চলতেই থাকবে। আধুনিক সময়ে যা হলো ক্ষমতাসীনদের অবাধ লুটপাট ও দুর্নীতি)।
কিন্তু ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর মাঝেও আমাদের মত ফ্যাসিবাদী শাসনের দেশে লুটপাট ও দুর্নীতি চরম পর্যায়ে থাকায় সেসবের অবস্থা বর্ণনাতীত। আমাদের দেশে সব আইন শেখ হাসিনার পকেটে, সব সমাধান দুর্নীতির হাতে। সরকারি খাতগুলো দুর্নীতির আখড়া। (স্বাস্থ্য-সামগ্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও তার প্রতিদানে এর সচিবকে দেয়া শেখ হাসিনার প্রমোশন-উপহার অনেকেই জানেন। এখন আবার শোনা যাচ্ছে ডাক্তারদেরকে খাওয়ানোর জন্য একটি কলা কেনার বিল করা হয়েছে এক হাজার টাকাÑ সংসদেও বিতর্ক হয়েছে এ নিয়ে)। এসব ব্যবস্থাতেও যতটা ভাল করা সম্ভব, হাসিনা সেটা করতেও সক্ষম নয়। দেখুন এবার বিশ্ব-পুঁজিবাদের নেতা দেশগুলো পরীক্ষায় সবচেয়ে খারাপ করেছে। বরং ছোট দেশগুলোই অনেক ভাল কাজ করেছে এখনো পর্যন্ত, যারা এই বিশ্ব-ব্যবস্থায় ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ, কম পুঁজিবাদ, বেশি জনকল্যাণ; আর বেশি পুঁজিবাদ, বেশি জনদুর্ভোগ। হাসিনার বাংলাদেশ তো ইতিমধ্যেই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের চাকরদের কাতারে বেশ দাম পাচ্ছে তার উন্নয়নের কারণে ও ভারতের মত বড় শয্যাশায়ীর স্থায়ী ভৃত্য হওয়াতে। সুতরাং সে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থায় দাম পাচ্ছে, তার দেশে বেশি জনদুর্ভোগ তো হবেই!
Ñ এই করোনাকালে হাসিনা আরেকটি চমক দেখিয়েছে তার গণবিরোধী চরিত্রের, পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করে দিয়ে। বেসরকারিতে সাড়ে তিন হাজার আর সরকারিতে ২০০ থেকে ৫০০। প্রশ্ন হলো, করোনা কোনো ব্যক্তির হয়না, হয় সমগ্র সমাজের, এখন তা হচ্ছে সমগ্র মানবজাতির। আগেই বলা হয়েছে, হয় সবাই নিরাপদ হবে, নতুবা কেউ নয়। ইতিমধ্যেই তো দেখা যাচ্ছে বহু উচ্চপর্যায়ের ধনী মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলেন এটা হলো সাম্যবাদী রোগ, কারো শ্রেণি বুঝে না (যদিও কথাটা পুরো সঠিক নয়, আংশিক)। খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফি নির্ধারণের পর একেবারে দরিদ্র মানুষ সেটা করবেন না। তাতে কী হবে? করোনা থেকে যাবে, ছড়িয়ে পড়বে। আতংকিত সেতুমন্ত্রী (নাকি জনগণকে প্রতারণা করার জন্য) বলেই ফেলেছেন, এটা ঠিক হচ্ছে না। (সবকিছুই যেহেতু হাসিনা মনিটরিং করছে তাই সে ব্যাপারে এর চেয়ে কঠোর করে কিছু তার পক্ষে বলাও সম্ভব নয়)।
নিজেদের ব্যর্থতা ও গণবিরোধিতা আড়াল করার জন্য তারা দায়টা জনগণের উপর চাপাতে চাচ্ছেÑ জনগণ সচেতন নয়, বস্তিগুলো করোনার কেন্দ্র হতে পারে ইত্যাদি।
জনগণের অসচেতনতা রয়েছে বটে, কিন্তু সেজন্য দায়ী কে? বস্তিগুলো করোনার কেন্দ্র হতে পারে, কিন্তু বস্তিগুলোর জন্য দায়ী কে? আওয়ামী-হাসিনা সরকার, শাসকশ্রেণি ও রাষ্ট্র ছাড়া আবার কে?
আশংকা করা অমূলক নয় যে, তারা চাইছে দরিদ্ররা মরে যাক। তার বিনিময়ে দেশে বেকারত্ব কমবে, দরিদ্র মানুষ কমবে, উন্নতি অব্যাহত থাকবে, প্রবৃদ্ধি ৮% হবে ইত্যাদি।

* একমাত্র প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক দেশ হলেই যে এ সমস্যার মোকাবিলা মৌলিকভাবে অনেক ভাল করে সম্ভব তা বলাই বাহুল্য। কারণ, তেমন একটি সমাজই পারে, চিকিৎসার মত মানবিক খাতকে কার্যকরভাবে মুনাফাবাজী থেকে মুক্ত করা এবং বৈষম্যের থেকে মুক্ত করা। আপনি চিকিৎসা করাবেন স্কয়ার, ইউনাইটেডে, আর রহিম-করিম যাবে ঢাকা মেডিকেলে মরতেÑ সেটা নিবারণ সমাজতন্ত্র ছাড়া সম্ভব নয়। সমাজতন্ত্র ছাড়া এমন লাগামছাড়া দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করাই সম্ভব নয়। (এমনকি এবারও তো হাসিনা সুযোগ করে দিয়েছে বিপুল দুর্নীতি করে, মানব পাচার করে, ব্যাংক ডাকাতি করে বিশাল অর্থ অর্জন করে ১০% কর দিয়ে টাকাটা বৈধ করে নেয়ার)। একইসাথে সরকারিকরণ ছাড়াও একমাত্র সমাজতন্ত্রই ধনী-গরীব সবার জন্য একই সুবিধা দেয়, সাম্রাজ্যবাদের মুনাফাভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে দেশকে ছিন্ন করতে পারে, সবার জন্য একটি সুস্থিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার অঙ্গাঙ্গী বিষয় হলো অসুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর উৎপাদন। এগুলোও সম্পূর্ণভাবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি না হলে সালমান রহমানদের মতো ডাকাতদের হাত থেকে কখনো জনগণ ভাল চিকিৎসা পেতে পারেন না। তারা এবং অনেক দালালরা বসে রয়েছে, কীভাবে বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন ও ঔষধ এনে ব্যবসা করবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছে, চীন তাদেরকে প্রথম ব্যবসায়ী হিসেবে বেছে নেবে।
সুতরাং এ ধরনের ‘আল্লার গজব’ থেকে রক্ষার প্রথম উপায় হলো, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপেই রাষ্ট্রকরণ করা। এবং দুর্নীতি উচ্ছেদ করা। এই হলো মূল দাবি। এভাবে চিকিৎসক ও চিকিৎসা-কর্মীদেরকে ব্যবসায়ী থেকে প্রকৃত চিকিৎসকে পরিণত করা। ‘আর্তের সেবা’টা পরেই হবে। এর সাথে যুক্ত হতে হবে দুর্নীতি করে যেন কেউ অর্থ বিদেশে পাচার করা বা গুলসানে বড় বাড়ি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। সেটা হতে পারে সর্বক্ষেত্রেই ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদের মাধ্যমে। দুর্নীতি উচ্ছেদের এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুবা পুঁজিবাদ থাকবে, আর দুর্নীতি থাকবেনাÑ সেটা হয়নি, হতেও পারে না।
দুটো বড় সমাজতন্ত্র লেনিন-স্ট্যলিনের রাশিয়া ও চীনের রাশিয়া জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটা এখানে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে সহজেই বোঝা সম্ভব যে, উপরোক্ত দুটো রোগ থেকে যদি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মুক্ত করা যায়, তাহলে বহু ইতিবাচক পদক্ষেপই সম্ভব। তারা যেসব সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল সেগুলো থেকে আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে এখানে উল্লেখ করা যায়।

১। প্রথমত, সমগ্র চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা, তার অংশ হিসেবে সমগ্র বিদেশি ও বড় ঔষধ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী উৎপাদনকে জাতীয়করণ করা এবং স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ে বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
২। চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
৩। ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। আপতকালীন সময়ে তাকে কিছুটা মেনে নিলেও তাদের প্র্যাকটিস সময় ও ফি নির্ধারণ করে দেয়া যা ডাক্তারদের বিশ্রাম, চিন্তা, গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখবে, পাশাপাশি জনগণের সাধ্যের মধ্যে থাকবে।
ডাক্তারদের বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা।
৪। রোগীকে এখানে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। প্রচণ্ড রোদের মাঝে করোনা রুগীরা এই ঢাকা শহরে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শুধু পরীক্ষার জন্য এর চেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য আর কী হতে পারে?
একে মৌলিকভাবে বদলে ফেলতে হবে। ডাক্তার যাবে রোগীর কাছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি মানুষের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে, সে রোগী হোক বা না হোক।
৫। চিকিৎসা হতে হবে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। প্রতিটি নাগরিক চিকিৎসা খাতে প্রতিমাসে বা বছরে তার প্রতিটি সদস্যের জন্য স্বাস্থ্য-কর দিতে পারেন, তাদের শ্রেণি অনুযায়ী। কিন্তু সেটা ছাড়া পরীক্ষা, চিকিৎসা ও ঔষধ কোনো কিছুর জন্যই নাগরিকরা অর্থ খরচ করবেন না। এটা তাদের মৌলিক অধিকার।
৬। চিকিৎসাকে নগরকেন্দ্রীক ও মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত কেন্দ্রীক নয়, গ্রামকেন্দ্রীক করতে হবে। এখনো বাংলাদেশের প্রায় ৭০% ভাগ মানুষ গ্রামেই থাকেন।
৭। শহরে করোনা বা যেকোনো মহামারীর কেন্দ্র হতে বাধ্য বস্তিগুলো। সুতরাং বস্তি এবং এধরনের বাসস্থানগুলো হতে হবে চিকিৎসার কেন্দ্র।
৮। সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের উপর মুনাফাবাজী ও টাকা বানানোর জন্য নির্ভর না করে দেশের গবেষণাকে ভিত্তি করতে হবে। হাসিনা করছে উল্টোটা। গণস্বাস্থ্যের কীট বহু টালবাহানা করে আটকে দেয়া হয়েছে। অথচ ভারত নিজে অস্টিজেন টেস্ট করছে। এমনকি অনেক গবেষক বলছেন পিসিআর টেস্টও ৭০%-এর বেশি কার্যকর নয়।
৯। দেশজ প্রাচীন চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথির গবেষণা বাড়িয়ে তাকে আধুনিক চিকিৎসার সাথে সমন্বিত করতে হবে। সমাজতান্ত্রিক চীনের বিস্ময়কর আকুপাংচার চিকিৎসার কথা অনেকেই জানেন।
১০। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে (এবং শিক্ষাখাতকে) সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এই করোনা কালেও শেখ হাসিনার যুগান্তকরী ‘মানুষের বাজেট’ জিডিপি’র তুলনায় স্বাস্থ্য-বাজেটকে নামমাত্র বাড়িয়েছে (মাত্র ০.৪%)।
যেকোনো পুঁজিবাদী দেশেও বাজেটে অন্তত ৬% বরাদ্দ থাকে স্বাস্থ্যখাতে। আর করোনাকালে বহু বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন অন্তত ১০ থেকে ২০% বরাদ্দ দেয়া হোক। সেটা না করে সরকার-হাসিনা বরাদ্দ বাড়িয়েছে প্রতিরক্ষা বাজেটে, যে সেনাবাহিনী কিনা বার্মার মত শক্তিকেও প্রতিরোধ করতে পারে না।
১১। প্রতিটি ইউনিয়নভিত্তিক হাসপাতাল নির্মাণ, ডাক্তারদেরকে সেখানে নিয়োগ, প্রতি ডাক্তার পিছু ৩ জন নার্স নিয়োগ, সে অনুযায়ী টেকনিশিয়ান নিয়োগ, এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নার্সিং ও টেকনিশিয়ান কলেজ স্থাপন যেগুলো কিনা আন্তর্জাতিক বুর্জোয়া বিশ্বেরই মানদন্ড।
১২। মহামারীর মত জাতীয় দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা, তাদেরকে সংগঠিত করা, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গড়ে তোলা এবং আমলা ও ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভর না করে, দলবাজ ডাক্তার, দলবাজ শ্রমিকনেতা নামের বুর্জোয়া মাস্তান ও দুর্নীতিবাজদের উপর স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ছেড়ে না দিয়ে তাকে মুক্ত করা। যার বিপরীতটা হাসিনা করছে।
১৩। সেনাবাহিনীর মত সুশৃংখল, কষ্টসহিষ্ণু ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সরকারি সংস্থাকে মহামারীর মত কাজে ব্যাপকভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করার জন্য নিয়োগ করা।
১৪। জনগণকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চেতনায় সজ্জিত করা, সমস্ত ধরনের কবিরাজি, পানিপড়াসহ অপচিকিৎসাকে নিষিদ্ধ করা, মহামারী বিষয়ে অবৈজ্ঞানিক প্রচারকে কঠেরভাবে প্রতিহত করা, ধর্মপালনের নামে মসজিদ-মন্দির-গির্জা-মাদ্রাসা-জানাজা-তবলিগ-ধর্মীয় সমাবেশকে অবাধে চলতে দেয়া প্রতিরোধ করা।
হাসিনা করছে বিপরীতটা।

* আরো বহু কর্মসূচি রয়েছে। যাকে জনগণের উপর নির্ভর করে, তাদের সৃজনশীলতা, সাহস, ত্যাগ, আত্মবলিদানের মনোভাব ও সম্মিলিত জ্ঞানের উপর নির্ভর করেই শুধু ক্রমান্বয়ে আরো সুনির্দিষ্ট ও আরো উন্নত করা সম্ভব। একইসাথে এই খাতে নিয়োজিত সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা যাকে চূড়ান্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হন, সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের দালাল না হন, তারা যদি ঔষধ ব্যবসায়ীদের থেকে উচ্চ মাত্রায় কমিশন না নেন, তারা যদি ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ হয়েই মনে না করেন যে বড় ধনী হওয়াটাই তাদের জীবনের লক্ষ্য, এবং তারা যদি জনসেবা, মানবসেবা বা আর্তের সেবাকে প্রকৃতই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জনগণকে একটি সুস্থ জীবন ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা পেতে হলে অবশ্যই চলমান ব্যবস্থা, চলমান রাষ্ট্র ও হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট পরিচালিত ভারতের দালালদের উচ্ছেদ করে একটি গণমুখী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একইসাথে উপরে আলোচিত বিষয়গুলোতে সুনির্দিষ্ট দাবি আকারে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। যাতে জনগণকে একটি সঠিক পরিবর্তনের জন্য সচেতন ও সংগঠিত করা যায়।

কেন্দ্রীয় কমিটি,পিবিএসপি